1. live@media71bd.com : Media71 : Media71
  2. info@www.media71bd.com : Media 71 :
বুধবার, ১৩ অগাস্ট ২০২৫, ০৭:৪০ অপরাহ্ন

৩৬ জুলাই: এক সংগ্রামের মধ্য দিয়ে অর্জিত নতুন বাংলাদেশের প্রত্যুষ

সম্পাদকীয়
  • প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ৫ আগস্ট, ২০২৫

২০২৪ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন আজ আর কেবল একটি দাবি কিংবা আন্দোলন নয়—এটি হয়ে উঠেছে একটি ইতিহাস, একটি দিকনির্দেশনা, একটি নবজাগরণের নাম। ৫ আগস্ট, যা আজ ‘৩৬ জুলাই’ নামে পরিচিত, সেই দিনটিই চিহ্নিত হয়ে আছে নতুন বাংলাদেশের পথচলার সূচনা হিসেবে। এই দিনটিকে উপলক্ষ করেই আমাদের উপলব্ধি—এই দেশ, এই সমাজ, এই রাষ্ট্রব্যবস্থা কেবল নির্বাচনী রাজনীতির উপর নির্ভরশীল নয়; বরং জনতার চেতনা, সাহসিকতা ও আত্মদানের মধ্য দিয়েই গড়ে উঠতে পারে একটি ন্যায্য, মানবিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্রব্যবস্থা।

শুরুটা হয়েছিল তুলনামূলক নিরীহ একটি দাবি দিয়ে—কোটার সংস্কার। কিন্তু বারবার আন্দোলন দমন, গ্রেপ্তার, গুম, গুলি আর মিথ্যাচারের মাধ্যমে সরকার সেই আন্দোলনকে এক ভয়ঙ্কর রূপ দিতে বাধ্য করে। ৪ আগস্টের রাতে দেশজুড়ে দমন-পীড়নের যে দৃশ্যপট তৈরি হয়, তা একদিকে যেমন রাষ্ট্রের নির্মমতাকে উন্মোচিত করে, তেমনি ৫ আগস্টে লক্ষ লক্ষ ছাত্র-জনতার ঢাকামুখী অভিযাত্রা রাষ্ট্রযন্ত্রের সীমাবদ্ধতাও স্পষ্ট করে দেয়। লাখো মানুষের প্রাণপণ লড়াইয়ের ফলে শেখ হাসিনার দীর্ঘদিনের শাসনের অবসান হয়। তার প্রস্থানে এক নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতা তৈরি হয়, যা বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক উত্তরণের সম্ভাবনাকে সামনে নিয়ে আসে।

৩৬ জুলাই শুধু একটি সরকার পতনের দিন নয়। এটি একটি যুগান্তকারী রূপান্তরের দিন। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ, প্রশাসনের দলীয়করণ, বিচার বিভাগের অসারতা, এবং অর্থনীতির বৈষম্যমূলক কাঠামো—এসবের বিরুদ্ধে জনগণের সম্মিলিত প্রতিরোধই আজ এই নতুন সূচনার ভিত্তি তৈরি করেছে। অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ, সর্বদলীয় বৈঠক, গণমাধ্যম ও ইন্টারনেটের স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনা, এবং কারফিউ প্রত্যাহারের মতো সিদ্ধান্তগুলো আমাদের মনে করিয়ে দেয়, জনগণের শক্তিই সর্বোচ্চ শক্তি।

তবে এই পথচলা সহজ ছিল না। প্রাণ হারিয়েছেন ২০০-এরও বেশি মানুষ, আহত হয়েছেন আরও অসংখ্য। রাজধানী থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত অঞ্চলে দমন-পীড়নের চিহ্ন এখনও স্পষ্ট। শহীদ পরিবারের আহাজারি, আহতদের আর্তনাদ, নিখোঁজদের আত্মীয়দের উৎকণ্ঠা—সব মিলিয়ে এই আন্দোলনের মূল্য অত্যন্ত ভারী। অথচ এই রক্তস্নাত পথেই জন্ম নিয়েছে নতুন একটি দিনের সূচনা, যেখানে মানুষ তার অধিকারের জন্য লড়তে জানে এবং জয়ী হতেও জানে।

এখন আমাদের করণীয়—এই ঐতিহাসিক বিজয়কে অর্থবহ করা। গণতান্ত্রিক চেতনা যেন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলোতে রোপিত হয়। ভিন্নমতের প্রতি শ্রদ্ধা, আইনের শাসন, অবাধ নির্বাচনী ব্যবস্থা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি—এসবকে রাষ্ট্রের মূল ভিত্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। একনায়কতন্ত্রের প্রত্যাবর্তনের সুযোগ যেন আর কখনো না ঘটে, সে বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে সবাইকে।

৩৬ জুলাই তাই কেবল অতীতের গৌরবগাথা নয়, এটি ভবিষ্যতের চুক্তিপত্র। এখানে স্বপ্ন আছে, ত্যাগ আছে, প্রতিশ্রুতি আছে। এই দিনের বার্তা স্পষ্ট: যে রাষ্ট্র তার নাগরিকের কণ্ঠরোধ করে, সে নিজেই নিজেকে শেষ করে দেয়। আর যে জাতি অন্যায়কে রুখে দাঁড়াতে জানে, তার ভবিষ্যৎ কেউ থামাতে পারে না।

নতুন বাংলাদেশ তাই শুধু একটি রাজনৈতিক ব্যবস্থা নয়; এটি একটি নৈতিক ও সামাজিক চেতনার নাম। এক সংগ্রামের মধ্য দিয়ে অর্জিত এই পথ চলা যেন থেমে না যায়—সেটাই হোক আজকের সংকল্প।

আরো সংবাদ পড়ুন
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, আমাদের প্রকাশিত সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার অপরাধ।
ওয়েবসাইট ডিজাইন : ইয়োলো হোস্ট
error: Content is protected !!