বাংলাদেশ ক্রিকেটের অবস্থা নিয়ে সমালোচনার মাঝেই বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) দায়িত্ব নিয়েছেন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক আমিনুল ইসলাম বুলবুল। দায়িত্ব নিয়েই ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ রূপরেখা ও দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছেন তিনি। জানিয়েছেন, দেশের প্রতিটি অঞ্চলে ক্রিকেট ছড়িয়ে দেওয়া, অবকাঠামো উন্নয়ন ও প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণই তার নেতৃত্বের মূল লক্ষ্য।
রোববার (১ জুন) গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, “বাংলাদেশ ক্রিকেটে আমরা একটি ‘ট্রিপল সেঞ্চুরি’ করার লক্ষ্যে কাজ করছি— শতভাগ ট্রাস্ট, শতভাগ প্রোগ্রাম এবং শতভাগ রিচ। এর আওতায় তিনটি মূল কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে— ‘স্পিরিট অব ক্রিকেট’ আপগ্রেড, হাই পারফরম্যান্স কাঠামো সব পর্যায়ে বাস্তবায়ন, এবং সারাদেশে বিসিবির সংযুক্তি।”
তিনি বলেন, “ক্রিকেট বোর্ড শুধু মিরপুরে বসে থাকবে না। আঞ্চলিক সংস্থাগুলো গঠনের কাজ শুরু হবে, যা ২০০০ সালে টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার পর থেকেই আলোচনায় ছিল কিন্তু বাস্তবায়ন হয়নি। এবার যেভাবেই হোক, সেটি করা হবে।”
বিসিবি নির্বাচনের প্রসঙ্গে বুলবুল জানান, “এখনও ৪৮ ঘণ্টা হয়নি দায়িত্ব নিয়েছি। নির্বাচন নিয়ে এখনই কিছু বলার সময় নয়। তবে প্রধানমন্ত্রী ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আমাদের পরিকল্পনার বিষয়ে সমর্থন দিয়েছেন।”
ঘরোয়া ক্রিকেটে আঞ্চলিক বৈষম্যের অভিযোগের প্রসঙ্গ টেনে বুলবুল বলেন, “আমরা চাই না ঢাকায় বসে চট্টগ্রাম বা রাজশাহীর দল তৈরি হোক। তৃণমূল থেকে শুরু করে জাতীয় দলে আসার একটি স্বচ্ছ, পারফরম্যান্স-ভিত্তিক পথ তৈরি করব।”
তিনি জানান, আঞ্চলিক সংস্থাগুলোকে অর্থায়ন করা হবে পারফরম্যান্স, ক্রিকেটারের সংখ্যা, কোচ ও আম্পায়ারদের মাপকাঠি অনুযায়ী। একে বলা হচ্ছে “ফান্ডিং মডেল”। এটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশের প্রতিটি অঞ্চলে ক্রিকেট উন্নয়নের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
বোর্ডে থাকা সাবেক ক্রিকেটারদের ভূমিকা নিয়ে বুলবুল বলেন, “নান্নু ভাই, আকরাম ভাই, লিপু ভাই, হাবিবুল বাশার— এরা বাংলাদেশের কিংবদন্তি। তারা মাঠ, উইকেট ও ড্রেসিং রুমের ভাষা বোঝেন। তাদের অভিজ্ঞতাকে আরও কার্যকরভাবে কাজে লাগাতে হবে। তবে শুধুমাত্র ভালো ক্রিকেটার হলেই ভালো কোচ বা প্রশাসক হওয়া যায় না। সে জন্য ট্রেনিং ও কাঠামোগত উন্নয়ন দরকার।”
তিনি আরও জানান, বোর্ডে যোগদানের আগেই মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ আন্তর্জাতিক কোচ হতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তাদের মতো আগ্রহীদের জন্য বিসিবির পক্ষ থেকে উন্নত প্রশিক্ষণ ও এডুকেশন প্রোগ্রাম চালু করা হবে।
বুলবুলের ভাষায়, “এই মুহূর্তে আমাদের প্রথম কাজ হলো ‘কানেক্ট অ্যান্ড গ্রো’ প্রোগ্রামের মাধ্যমে তৃণমূলে ক্রিকেট পৌঁছে দেওয়া। বুরোক্রেটিক নয়, সহজ উপায়ে, সরাসরি ক্রিকেট নিয়ে কাজ শুরু করব।”
তিনি দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেন, “প্রয়োজনে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতেও আমরা পিছপা হবো না। ক্রিকেটের বিকাশে যা কিছু প্রয়োজন, তা করব।”