
বদনজরের প্রভাব সত্য। আমাদের সমাজে এমন অনেক মানুষ আছেন, যাদের দৃষ্টিতে অন্যের ক্ষতি বা বিপদ ঘটে বলে বিশ্বাস করা হয়। মূলত বদনজর হলো মানুষের হিংসাত্মক কুদৃষ্টির কুফল। আল্লাহর স্মরণ ছাড়া গাফেল অবস্থায় কোনো জিনিসের প্রতি তীক্ষ্ণ ও হিংসাত্মক দৃষ্টিতে তাকালে তা মানুষের বা বস্তুর ক্ষতির কারণ হতে পারে— একে-ই বদনজর বলা হয়।
যাকে বদনজর করা হয়, তার ওপর যেন বিষাক্ত তীর নিক্ষিপ্ত হয়। এই প্রভাব কখনও কার্যকর হয়, আবার কখনও হয় না। যদি আক্রান্ত ব্যক্তি প্রতিরক্ষাহীন অবস্থায় থাকে, তখন বদনজর কার্যকর হয়; কিন্তু আল্লাহর স্মরণ ও দোয়ায় সুরক্ষিত থাকলে, ওই কুদৃষ্টি তার কোনো ক্ষতি করতে পারে না।
পবিত্র কোরআন ও হাদিসে বদনজরের সত্যতা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। এটি কোনো কুসংস্কার নয়। কোরআনে হজরত ইয়াকুব (আ.) তাঁর সন্তানদের আত্মরক্ষার চিন্তায় কুদৃষ্টি ও হিংসার আশঙ্কায় এক দরজা দিয়ে শহরে প্রবেশ করতে নিষেধ করেছিলেন। (সূরা ইউসুফ: ৬৭-৬৮)
আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “বদনজরের প্রভাব সত্য।” (বোখারি: ৫৩২৯; মুসলিম: ৫৫১৩)
উবাইদ ইবনে রিফাআ আজ-জুরাকি (রা.) বর্ণনা করেন, আসমা বিনতে উমায়স (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বললেন, “হে আল্লাহর রাসুল, জাফরের সন্তানদের খুব নজর লাগে। আমি কি তাদের ঝাড়ফুঁক করাতে পারি?” তিনি বললেন, “হ্যাঁ, কোনো জিনিস যদি তকদিরকে অতিক্রম করতে পারত, তবে বদনজরই তা পারত।” (তিরমিজি: ২০৫৯)
আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, “তোমরা আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাও, কেননা বদনজর সত্য ও বাস্তব।” (ইবনে মাজাহ: ৩৫০৮)
প্রতিদিন সকাল ও সন্ধ্যায় নিচের দোয়াগুলো পড়া অত্যন্ত উপকারী—
১. সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক ও সুরা নাস — প্রতিটি তিনবার করে পড়া। (তিরমিজি: ৩৫৭৫)
২. দোয়া:
বাংলা উচ্চারণ:
“বিসমিল্লাহিল্লাজি লা ইয়াদুররু মা’আসমিহি শাইউন, ফিল আরদি ওয়ালা ফিসসামা’ই, ওয়া হুয়াস সামিউল আলিম।”
(তিরমিজি: ৩৩৩৫)
সকাল-সন্ধ্যায় এই দোয়াগুলো কয়েকবার পড়ে শরীরে ফুঁ দিলে বা হাত বুলিয়ে নিলে আল্লাহর রহমতে বদনজর থেকে সুরক্ষা পাওয়া যায়।
রাসুলুল্লাহ (সা.) হাসান ও হুসাইন (রা.)-এর জন্য বিশেষ দোয়া পড়তেন এবং তাদের গায়ে ফুঁ দিতেন—
বাংলা উচ্চারণ:
“আউজি বিকালিমাতিল্লাহিত তাম্মাহ, মিন কুল্লি শাইতানিন ওয়া হাম্মাহ, ওয়া মিন কুল্লি আইনিন লাম্মাহ।”
(বোখারি: ৩১৯১)
অভিভাবকরা শিশুদের জন্য এই দোয়াটি নিয়মিত পড়লে বদনজর থেকে তারা নিরাপদ থাকবে ইনশাআল্লাহ।
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২৫
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি
Leave a Reply