স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানিয়েছেন, মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ার গুয়াগাছিয়া ইউনিয়নের জামালপুর গ্রামে সদ্য প্রতিষ্ঠিত পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের ওপর হামলাকারী নৌ ডাকাত নয়ন-পিয়াসরা বর্তমানে দেশে নেই; তারা পাশের দেশে পালিয়ে গিয়েছে। তিনি বলেন, “তারা যদি দেশে ফিরে আসে, তাদের গন্তব্য হবে সোজা কেরানীগঞ্জ কারাগার, এর বাইরে কোথাও নয়।”
শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৪টায় জামালপুরে স্থাপিত অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ মন্তব্য করেন তিনি।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, তাঁর বাড়ি মুন্সীগঞ্জে হওয়ায় তিনি দীর্ঘদিন ধরে এই নৌ ডাকাত গ্রুপ সম্পর্কে জানেন। তাদের হাতে থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বোচ্চ তৎপরতা চালাচ্ছে। ক্যাম্পটি স্থায়ী করার জন্য ইতিমধ্যে প্রস্তাব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে এবং শিগগিরই এটি স্থায়ী রূপ পাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
অস্ত্র উদ্ধারের বিষয়ে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, “পুলিশ আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছে। পাশাপাশি যারা লুট হওয়া অস্ত্রের সন্ধান দেবে তাদের জন্য পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। সন্ধানদাতার পরিচয়ও গোপন রাখা হবে।”
এ সময় মুন্সীগঞ্জের আলুচাষিদের দুর্দশা প্রসঙ্গে কৃষি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে তিনি বলেন, আলুর ন্যায্য দাম নিশ্চিত করতে হিমাগারে ২২ টাকা কেজি মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে হিমাগার থেকে আলু প্রত্যাশিতভাবে বের হচ্ছে না। বর্তমানে আগের তুলনায় কেজিপ্রতি দাম এক থেকে দেড় টাকা বেড়েছে, আর আগামী ১৫ দিনের মধ্যে দাম আরও বাড়তে পারে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে এ সময় উপস্থিত ছিলেন পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি রেজাউল করিম মল্লিক, মুন্সীগঞ্জের জেলা প্রশাসক ফাতেমা তুল জান্নাত, পুলিশ সুপার মুহম্মদ শামসুল আলম সরকার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মোহাম্মদ কাজী হুমায়ন রশীদ এবং গজারিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আশরাফুল আলম।
প্রসঙ্গত, দীর্ঘদিন ধরে মেঘনা ও এর শাখা নদীতে অবৈধ বালু ব্যবসা ও নৌযানে চাঁদাবাজি করে আসছিল নয়ন, পিয়াস, রিপন ও লালু বাহিনী। গত এক বছরে তাদের অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষে কয়েকজন নিহতও হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গত ২২ আগস্ট জামালপুর গ্রামে একটি অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প চালু করা হয়। কিন্তু ২৫ আগস্ট ওই ক্যাম্প-সংলগ্ন মেঘনা নদীতে ডাকাতরা লুট করা অস্ত্র ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পুলিশের ওপর হামলা চালায়।
এ ঘটনায় ২৬ আগস্ট গজারিয়া থানার উপপরিদর্শক আজহারুল ইসলাম খান বাদী হয়ে নৌ ডাকাত পিয়াসকে প্রধান আসামি করে ২০ জনের নাম উল্লেখসহ আরও ২৫–৩০ জন অজ্ঞাতনামাকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। পরে পিয়াসের বড় ভাই রিপন সরকার (৪১), জামিল উদ্দিন (৪০) এবং হারুন মেম্বার (৪৭)কে গ্রেফতার করা হয়। তবে মামলার মূল আসামিদের কাউকে এখনও ধরা সম্ভব হয়নি, অস্ত্রও উদ্ধার করা যায়নি।