জুলাই অভ্যুত্থান দিবসে কক্সবাজারে অবস্থান করায় শোকজ করা হয়েছিল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণ) হাসনাত আবদুল্লাহকে। শোকজ নোটিশের লিখিত জবাবে তিনি কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন, যা বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) নিজের ফেসবুক আইডিতে শেয়ারও করেন।
জবাবে তিনি বলেন, “দলের উচিত ছিল গোয়েন্দা সংস্থা ও অসৎ মিডিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া। বরং আমাদের বিরুদ্ধে এমন ভাষায় শোকজ জারি করা হয়েছে, যা মিথ্যা অভিযোগ ও ষড়যন্ত্রতত্ত্বকে উসকে দিয়েছে।”
তিনি অভিযোগ করেন, ঘোষণাপত্র তৈরির সময় শহীদ পরিবার, আহত ও নেতৃত্বদানকারী অনেকেই মতামত দেওয়ার সুযোগ পাননি। এমনকি তাঁদের ন্যূনতম সম্মানটুকুও দেওয়া হয়নি। “ঘোষণাপত্রের খসড়ায় এমন কিছু উপাদান রয়েছে, যা অভ্যুত্থানের মূল আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়,”— বলেন তিনি।
প্রধান অভিযোগ ও জবাবের সারাংশ:
তিনি দাবি করেন, ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে—সংবিধান সংস্কারের দায়িত্ব পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের হাতে দেওয়া হবে, যা বাস্তবতার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। দল বরাবরই নতুন সংবিধান প্রণয়নের দাবি জানিয়ে আসছে।
৪ আগস্টের অনুষ্ঠান থেকে অভ্যুত্থানে আহত ও নেতৃত্বদানকারী অনেককে বাদ দেওয়াকে তিনি “নৈতিক ব্যর্থতা” আখ্যা দেন। এ কারণেই তিনি অনুষ্ঠানে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন এবং ঢাকার বাইরে যান।
তিনি জানান, ভ্রমণে যাওয়ার বিষয়টি তিনি দলের আহ্বায়ক ও মুখ্য সমন্বয়ককে আগেই অবহিত করেন এবং তাদের সম্মতি পান।
গোয়েন্দা সংস্থা ও মিডিয়ার ভূমিকা নিয়ে উদ্বেগ:
হাসনাত অভিযোগ করেন, “আমাদের প্রতিটি পদক্ষেপের ছবি ও ভিডিও গোয়েন্দা সংস্থা মিডিয়ার হাতে তুলে দিয়েছে। মিডিয়া সেগুলো ক্রাইম মুভির মতো সাজিয়ে মিথ্যা অভিযোগ ও বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়েছে।” এমনকি ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ছড়ানো হয়েছে যে তারা যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে ‘গোপন বৈঠকে’ গিয়েছেন—যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তিনি আরও বলেন, “এই ধরনের ‘ডিমোনাইজেশন’ টেকনিক আগে যেমন বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হয়েছে, এখন আমাদের বিরুদ্ধেও তা প্রয়োগ করা হচ্ছে।”
নারী নেত্রীকে ঘিরে কুরুচিকর প্রচার:
শোকজকৃত এই নেতা বিশেষভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তাসনিম জারার বিরুদ্ধে চালানো অনলাইন স্লাটশেইমিংয়ের বিষয়েও। তিনি বলেন, “শুধু নারী হওয়ার কারণে তাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও অশালীনভাবে হেয়প্রতিপন্ন করা হয়েছে। এই আক্রমণ ভবিষ্যতে নারীদের রাজনীতিতে অংশগ্রহণে নিরুৎসাহিত করতে পারে।”
দলের প্রতি আহ্বান:
শোকজ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমার বিরুদ্ধে শোকজে কোনো গঠনতন্ত্রভিত্তিক অভিযোগ নেই। এটি বিধিবহির্ভূতভাবে জারি এবং মিডিয়ায় প্রকাশ করা হয়েছে। রাজনৈতিক প্রজ্ঞার অভাব থেকেই এমনটি হয়েছে বলেই আমার মনে হয়।”
শেষে তিনি এনসিপির প্রতি নিজের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, “পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও গণতান্ত্রিক সহনশীলতার মাধ্যমেই আমাদের দল আরও পরিণত হবে। আমি কৃতজ্ঞ যে আমাকে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।”