
তারকাদের হাতে-মুখে লেখা এক একটি নম্বরের ছবি প্রকাশ করে সামাজিক মাধ্যমে শুরু হয়েছে তুমুল প্রতিবাদ—নারী নিগ্রহ ও ডিজিটাল সহিংসতার বিরুদ্ধে এক নীরব বিপ্লব।
নম্বর দিয়ে এমন প্রতিবাদ দেশেও নতুন, বিশ্বেও বেশ স্বতন্ত্র। ঠিক কবে এবং কোন ঘটনার প্রেক্ষিতে এই আন্দোলন শুরু হয়েছিল, তা জানা যায়নি। তবে ২৫ নভেম্বর তারকাদের মধ্যে প্রথম এই পোস্ট দেন অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কৃতি উপদেষ্টা নুসরাত ইমরোজ তিশা। এরপর তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে আলোচিত অভিনেত্রী শবনম ফারিয়ার পোস্ট থেকে। এরপর থেকে নারী শিল্পীরা একই ক্যাপশন ও হ্যাশট্যাগ (#MyNumberMyStory #16daysofactivism) ব্যবহার করে নিজেদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করছেন।
প্রতিটি পোস্টে দেখা যায়, কেউ হাতে, কেউ মুখে, কেউ আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে শরীরের ওপর নম্বর লিখে ছবি প্রকাশ করছেন। প্রথম দেখায় এটি যেন রহস্যজনক একটি ট্রেন্ড, তবে গভীরে দেখলে বোঝা যায়—এটি ডিজিটাল সহিংসতা ও অনলাইন হয়রানির বিরুদ্ধে এক প্রতীকী প্রতিবাদ।
তারকাদের ভাষ্য অনুযায়ী, ডিজিটাল সহিংসতা শুধু মানসিক ক্ষতি নয়; ক্যারিয়ার ধ্বংস, সামাজিক সম্পর্ক ভাঙন, আত্মসম্মানহানি এবং চরম ক্ষেত্রে আত্মহত্যার মতো পরিণতিও ঘটছে। অথচ অনেক ভুক্তভোগী আইনি সহায়তা নিতে ভয় পান—লজ্জা, ভয় ও সামাজিক চাপের কারণে।
অভিনেত্রী রুনা খান তার ছবি পোস্ট করে লিখেছেন, “আমার সংখ্যা ২৪। কেউ হয়তো এটাকে শুধু একটি সংখ্যা মনে করবে, কিন্তু আমার জন্য এটি হলো প্রতিটি মুহূর্ত যা আমি সহ্য করেছি, প্রতিটি ক্ষত যা আমি বহন করেছি, এবং প্রতিটি পদক্ষেপ যা আমাকে এগিয়ে উঠতে সাহায্য করেছে। এবার তোমার সংখ্যা বলো।”
এই আন্দোলনের মাধ্যমে তারকারা মূলত তিনটি বার্তা দিতে চাইছেন—অনলাইন হয়রানি কোনো তুচ্ছ বিষয় নয়, ভুক্তভোগীরা একা নন, এবং ডিজিটাল অপরাধের বিরুদ্ধে আইনি ও সামাজিক সচেতনতা জরুরি।
সবচেয়ে বড় অর্জন হলো নীরবতা ভাঙা। এতদিন যারা ব্যক্তিগতভাবে হয়রানির শিকার হয়েও চুপ থেকেছেন, তারা এখন কথা বলার সাহস পাচ্ছেন। সাধারণ মানুষও তারকাদের অনুসরণ করে নিজের অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করছেন। কমেন্টে দেখা যাচ্ছে ভয়ংকর অভিজ্ঞতার গল্প—ফেক ভিডিও, ব্যক্তিগত ছবি ফাঁসের হুমকি, অবিরাম অশ্লীল বার্তা ও স্টকিং।
বাংলাদেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও সাইবার ট্রাইব্যুনাল থাকলেও বিচার প্রক্রিয়া এখনও জটিল ও সময়সাপেক্ষ। তাই তারকারা একদিকে আইনের কঠোর প্রয়োগের দাবি তুলছেন, অন্যদিকে সামাজিক দায়বদ্ধতার কথাও স্মরণ করাচ্ছেন। ট্রোলিং, মিথ্যা অপপ্রচার ও সাইবার বুলিং কেবল আইনি নয়, নৈতিক সমস্যা হিসেবেও সমাধান প্রয়োজন।
সমাজ চিন্তকরা বলছেন, হাতে-মুখে লেখা একটি নম্বর—ছোট্ট হলেও গভীর বার্তা বহন করে। এটি বলে দিচ্ছে, ডিজিটাল দুনিয়ায় কাউকে আঘাত করা মানে বাস্তব জীবনেও তাকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেওয়া। প্রতিবাদটি কোনো মিছিল বা স্লোগানভরা সমাবেশ নয়; এটি এক ধরনের নীরব আর্ট, নীরব চিৎকার।
তারকা মডেল ও আইনজীবী পিয়া জান্নাতুল লিখেছেন, “আমি আশা করেছিলাম, একটি নম্বর দিয়ে আমার গল্প শেয়ার করবো। কিন্তু সত্যিকার অর্থে আমার নম্বর গুনে শেষ করা যায় না। প্রতিদিন আমাকে বুলিংয়ের শিকার হতে হচ্ছে। কিন্তু আমি প্রতিদিন তাদের বিরুদ্ধে কথা বলি, তাদের সামনে দাঁড়িয়ে থাকি অটল। এটাই আমার গল্প।”
গত দুই দিনে আরও অংশ নিয়েছেন রাফিয়াত রশিদ মিথিলা, আশনা হাবিব ভাবনা, মৌসুমী হামিদ, মৌসুমি নাগ, রিচি সোলায়মান, মৌসুমী মৌ, কণ্ঠশিল্পী পুতুল প্রমুখ।
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২৫
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি
Leave a Reply