
গত পাঁচ দশকে দারিদ্র্য বিমোচনে উল্লেখযোগ্য সাফল্য দেখিয়েছে বাংলাদেশ। তবে সাম্প্রতিক গবেষণাগুলো বলছে, গত দুই–তিন বছরে দারিদ্র্যের হার আবারও বেড়েছে। দেশের সার্বিক উন্নয়ন ইতিবাচক হলেও কিছু উপজেলা এখনো রয়ে গেছে গভীর আর্থসামাজিক সংকটে।
কর্মসংস্থান, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবায় বৈষম্য, নদীভাঙন, চরাঞ্চলের অনিশ্চয়তা এবং কৃষিনির্ভরতার সীমাবদ্ধতা এসব অঞ্চলের মানুষকে অনিশ্চিত জীবনে ঠেলে দিয়েছে।
সরকারি সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি ও এনজিওগুলোর উদ্যোগ থাকলেও তা এখনো পর্যাপ্ত নয় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বিশেষ করে এসব উপজেলায় লক্ষ্যভিত্তিক কর্মসংস্থান, নারী শ্রমশক্তির অংশগ্রহণ বৃদ্ধি, যোগাযোগব্যবস্থা উন্নয়ন এবং শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের প্রয়োজনীয়তা এখন সময়ের দাবি।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ দারিদ্র্য মানচিত্র (২০২4) অনুযায়ী দেশের সবচেয়ে দরিদ্র ১০টি উপজেলার মধ্যে মাদারীপুর জেলার পাঁচটি উপজেলা রয়েছে। জেলা পর্যায়ে মাদারীপুরেই দারিদ্র্যের হার সর্বাধিক।
নিচে উপজেলার তালিকা ও সংক্ষিপ্ত বিবরণ—
দেশের সবচেয়ে দরিদ্র উপজেলা ডাসার। দারিদ্র্যের হার ৬৩.২ শতাংশ—অর্থাৎ প্রতি তিনজনের দুজনই দরিদ্র। পাঁচটি ইউনিয়ন—বালিগ্রাম, কাজীবাকাই, গোপালপুর, ডাসার ও নবগ্রাম নিয়ে গঠিত এ উপজেলা।
দারিদ্র্যের হার ৫৯.৬ শতাংশ। সীমান্তবর্তী এ উপজেলা অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে। এখানকার মূল অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড নির্ভর করে গোবরাকূড়া–কড়ইতলি স্থলবন্দর ঘিরে।
দারিদ্র্য হার ৫৬.৩ শতাংশ। কৃষিনির্ভর এ উপজেলায় শিল্পকারখানা প্রায় নেই বললেই চলে।
দারিদ্র্য হার ৫৫.৬ শতাংশ। পদ্মা সেতুর মাধ্যমে রাজধানীর সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগে গুরুত্বপূর্ণ এ উপজেলা কৃষিনির্ভর এবং খাল-বিলসমৃদ্ধ।
দারিদ্র্য হার ৫৫.১ শতাংশ। পদ্মা নদীর তীরবর্তী ও চরাঞ্চল ঘেরা এলাকা। পদ্মা সেতু চালুর আগে যোগাযোগ ব্যবস্থা দুর্বল থাকলেও বর্তমানে উন্নতির পথে।
বরিশাল বিভাগের সবচেয়ে দরিদ্র উপজেলা—দারিদ্র্য হার ৫৩.৮ শতাংশ। নদীঘেরা এ অঞ্চলের অর্থনীতি কৃষিনির্ভর; শীতলপাটি, পান ও মৃৎশিল্প এখানকার ঐতিহ্য।
দারিদ্র্য হার ৫২.৯ শতাংশ। কৃষি ও মৎস্য এই উপজেলার মানুষের প্রধান জীবিকা।
দারিদ্র্য হার ৫০ শতাংশ। সদর উপজেলাগুলোর মধ্যে এ একমাত্র উপজেলা যেখানে অর্ধেক মানুষ দরিদ্র। পদ্মা সেতুর পর এখানে অর্থনৈতিক কার্যক্রম কিছুটা বেড়েছে।
দারিদ্র্য হার ৪৯.৫ শতাংশ। কৃষিনির্ভর এ উপজেলা থেকে উৎপাদিত সবজি, কাঁঠাল, কলা, লটকন দেশের বিভিন্ন স্থানে ও বিদেশে রপ্তানি হয়।
উত্তরবঙ্গের একমাত্র উপজেলা হিসেবে তালিকায় বোদার অবস্থান। দারিদ্র্য হার ৪৮.২ শতাংশ। কৃষিপ্রধান এই উপজেলায় ধান, পাট, গম, আলু, বাদাম, আখ ও ভুট্টা উৎপন্ন হয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব দরিদ্র উপজেলায় অর্থনৈতিক বৈচিত্র্য সৃষ্টি, কৃষির আধুনিকায়ন এবং ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য আর্থিক সহায়তা বৃদ্ধি ছাড়া দারিদ্র্য হ্রাস সম্ভব নয়।
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২৫
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি
Leave a Reply